প্রতিদিন খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
প্রতিদিন খালি পেটে কলা খেলে কি হয় ও কখন কলা খাওয়া উচিত নয় এসব সম্পর্কে বিষয়
গুলো জানতে হলে আমাদের পোস্ট টি পড়ুন। তাহলে আপনি কলা খেলে কি কি হয় এসব
সম্পর্কে জানতে পারবেন।
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু
পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। আশা করি আপনি যদি সে পয়েন্ট গুলো মনোযোগ সহকারে পড়েন।
তাহলে আপনি কলা সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্যগুলো জানতে পারবেন।
ভূমিকা
কলা হলো এক প্রকারের সারা দেশের জনপ্রিয় ফল। কলা উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশগুলোতে
ভালো জন্মায়। কলায় রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার
এবং অন্যান্য
পুষ্টিকর
উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী। কলা খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে, কিডনী সুরক্ষিত
থাকে,
আরও পড়ুনঃ
দিনে কয়টা করে খেজুর খাওয়া উচিত
ত্বকের যত্ন
নেয়া যায়, ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং অনেক রোগের প্রতিরোধ করা যায়। কলা
গাছের পাতা, কাঁদি, ছোবড়া ও কন্দ সবগুলোই বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
কলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো মুসা (Musa)। কলা হলো একটি জীববিজ্ঞানীদের ব্যবহৃত
শব্দ,
যা বুঝায় এমন একগুচ্ছ কোষ, যারা একই স্থান থেকে উৎপত্তি লাভ করে একই ধরনের কাজ
সম্পন্ন করে। আশা করি আপনি কলার বিষয়ে একটু বেশি জানতে পেরেছেন। আপনি যদি আরো
কিছু জানতে চান, তাহলে নিচের পয়েন্ট গুলো পড়ুন।
প্রতিদিন খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
খালি পেটে কলা খেলে কী হয় তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু পুষ্টিবিদ বলেন,
কলায় পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও চিনি থাকে, যা খালি পেটে খেলে রক্তের শর্করা,
রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করে। এজন্য সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত
নয়, কারণ খালি পেটে কলা খেলে আপনার শক্তি কয়েক ঘণ্টা পরে বেরিয়ে যাবে।
এর ফলে আপনি অলস হয়ে পড়বেন, ক্লান্ত লাগবে, এবং ঘুম পাবেন। তাই খালি পেটে কলা না
খাওয়াই ভালো। অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় শুকনো কিছু খাবারের সঙ্গে কলা
মিলিয়ে খাওয়া ভালো। তা না হলে শরীরে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা
দেখা দেয়। এতে হৃদ রোগ হওয়ার শঙ্কা থাকে।
শুধু সকালে
কলা নয়, বরং কোনো ফলই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এখনকার দিনে সতেজ কোন ফল
খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে। এছাড়া ফলগুলোতে নানা রাসায়নিক থাকে। তাই সকালে
খালি পেটে এসব খাবারের রাসায়নিকগুলো সরাসরি পেটে প্রবেশ করে। তখন পুষ্টি সরবরাহ
করার বদলে এগুলো শরীরে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি
কলা একটি অত্যন্ত পরিচিত
ফল। এর সুলভ মূল্যের কারণে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ফল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে
কলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময় থেকে শুরু করে ত্বক, চোখ,
চুল, পা, দাঁত ইত্যাদির যত্নেও ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ ও পাকা
অবস্থায় এটি হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
আরও পড়ুনঃ
প্রতি দিন পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
বাংলাদেশ সহ ভারত এবং ভারতীয় উপমহাদেশে কলার জনপ্রিয় জাত গুলো হচ্ছে- সাগর কলা,
চাপা কলা, আনাজি কলা, সবরি কলা এবং বিচি কলা। একেক জাতের ফল মানে এবং স্বাদে
একেক রকম। কিন্তু সব জাতের কলাতেই কিছু উপাদান বিদ্যমান। আসুন জেনে নিই কলার
বিভিন্ন পুষ্টিগুণ গুলো।
- কলা হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনে এবং মানসিক চাপ কমায়। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং এমাইনো এসিড এই কাজগুলো করে।
- কলা হজমের গণ্ডগোল, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর আলসার ও ডায়রিয়া দূর করে। এতে থাকা ফাইবার এবং পেক্টিন পাচনতন্ত্রকে উন্নত করে এবং এসিডিটি কমায়।
- কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তের ন্যাট্রিয়াম মাত্রা কমিয়ে রক্তচাপ কমায়।
- কলা রক্তস্বল্পতা দূর করে। এতে থাকা আয়রন, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি১২ রক্তের হিমোগ্লোবিন মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- কলা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এতে থাকা ফলাভিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের ক্ষতি রোধ করে এবং মেমরি সেলগুলোকে সক্রিয় রাখে।
এছাড়াও কলা খাওয়ার মাধ্যমে আপনি অনেক ধরনের উপকারিতা পাবেন। এবং কলা
গর্ভাবস্থায়, হার্মোনাল ব্যালেন্সে, ত্বকের যত্নে, চোখের সুস্থ্যে ও রোহ
প্রতিরোধেও উপকারী হয়। তাই প্রতিদিন কলা খেয়ে সুস্থ্য থাকুন।
কলা খাওয়ার আপকারিতা কি কি
কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক, কিন্তু কিছু আপকারিতা ও রয়েছে। কলা খাওয়ার আপকারিতা
গুলো হলো-
- কলা খাওয়ার পর পানি খেলে পেটে গ্যাস হয়ে যেতে পারে। এজন্য কলা খাওয়ার পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট পর পানি খেতে হবে।
- কলা খাওয়ার সময় যদি কাঁচা কলা খেতে হয়, তাহলে তা ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। কারণ কাঁচা কলার ছিলে বা ত্বকে থাকা কীটনাশক বা জীবানু শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।
- কলা খাওয়ার পর দাঁত মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। কারণ কলাতে থাকা মিষ্টি দাঁতে আটকে যেতে পারে এবং দাঁতের ক্ষতি বা ক্যাবিটিসের কারণ হতে পারে।
- কলা খাওয়ার পর চা বা কফি খেলে তা শরীরের আয়রন ও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। এজন্য কলা খাওয়ার পর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পর চা বা কফি খেতে হবে।
- কলা খাওয়ার পর দুধ বা দই খেলে তা পেটের সমস্যা বা এলার্জির কারণ হতে পারে। এজন্য কলা খাওয়ার পর কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা পর দুধ বা দই খেতে হবে।
- কলা খাওয়ার পর অনেকেরই পেট ফুলে যেতে পারে।
- সর্দির সময় কলা খাওয়ার পর অনেকেই মুখে বা গলায় ঝিঁঝিঁপোকা অনুভব করেন।
- ভরা পেটে কলা খাওয়ার পর অনেকেই পেটে ব্যথা অনুভব করেন।
সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সময়ে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকল বয়সের
মানুষদের কলা খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে অতিরিক্ত সব কিছুই খারাপ এবং
অস্বাস্থ্যকর নয়। কলা ভক্ষণের সময় এই দিকটি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়াও, কিছু
মানুষ কলা খাওয়ার পর
এলার্জির
প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে
যোগাযোগ করতে হবে।
কখন কলা খাওয়া উচিত নয়
কলা একটি পুষ্টিকর এবং শক্তিদায়ক
ফল, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। তবে কলা খাওয়ার সময় ও পরিমাণ নির্দিষ্ট
রাখতে হবে, নয়তো কলা শরিরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কলা খাওয়ার সময় এবং
পরিমাণ নির্ধারণে আপনার শরীরের অবস্থা, রোগের ইতিহাস, আয়ু ও ওজন বিবেচনা করতে
হবে। আমি আপনাকে কিছু সাধারণ নির্দেশনা দিতে পারি।
যা আপনি কলা খাওয়ার সময় মনে রাখতে পারেন। যেমন,
খালি পেটে
কলা খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়াতে পারে। কলায় প্রচুর
পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই
সকালের নাস্তায় শুধু কলা না খাওয়ায় ভালো। রাতে কলা খাওয়া উচিত নয়, যারা
সর্দি, কাশি, অ্যাজমা, সাইনাস বা অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন।
তারা রাতে কলা খাবেন না, কারণ কলা শ্লেষ্মা বা কফের পরিমাণ বাড়াতে পারে। যা
আপনার রোগের লক্ষণকে আরও খারাপ করতে পারে। কলা ঠাণ্ডা ফল, যা শরীরের তাপমাত্রা
কমাতে পারে। তাই শীতের রাতে কলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কলা খাওয়ার সেরা
সময় হলো সকাল বা বিকেলে জলখাবারে। কলা পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের
আরও পড়ুনঃ
আনারস কোন মাটিতে ভালো হয়
গুণাগুণে ভরপুর, যা শরীরের শক্তি, পাচন, রক্তচাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের
কার্যকরিতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কলা খাওয়ার পরিমাণ
নির্ধারণে আপনার ওজন, আয়ু, শরীরের অবস্থা ও রোগের ইতিহাস বিবেচনা করতে হবে।
সাধারণত, একজন স্বাস্থ্যকর ব্যক্তি প্রতিদিন এক থেকে তিনটি কলা খেতে পারেন।
তবে যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা অন্যান্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খাওয়া উচিত। আশা করি, এই তথ্যগুলি আপনার কাজে
লাগবে। কলা খাওয়ার সময় ও পরিমাণ নির্ধারণে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা ও রোগের
ইতিহাস বিবেচনা করে আপনি একজন স্বাস্থ্য পেশাদার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
শেষ কথা
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url