ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয়
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয় ও মশা ও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ কি এই সব
ধরনের বিভিন্ন তথ্য গুলো পেতে হলে আপনি এই পোষ্ট টি পড়ুন। তাহলে আপনি বুজতে
পারবেন, যে ডেঙ্গু মাশাতে কামড়ালে কি হয়।
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে মশা সম্পর্কে আরো নতুন কিছু পয়েন্ট যোগ করা
হয়েছে। আপনি যদি সে পয়েন্ট গুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে মনোযোগ সহকারে
পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি ডেঙ্গু মশা সম্পর্কে অজানা তথ্য গুলো জানতে পারবেন।
ভুমিকা
ডেঙ্গু মশা হলো একধরনের এডিস মশা, যা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। এই মশা সাদা-কালো
ডোরাকাটা দাগের মতো হয়ে থাকে এবং দিনের সময় কামড়ায়। এই মশা কামড়ালে ডেঙ্গু
জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন
জ্বর, মাথাব্যথা,
পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা, গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে
পারে যদি রক্তপাত বা রক্তচাপের অবনতি ঘটে।
আরো পড়ুনঃ
চুলকানি দুর করার সহজ উপায় গুলো জেনে নি
ডেঙ্গু মশা প্রতিরোধের জন্য মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা, পানি অপসারণ করা, শরীরের
বেশির ভাগ অংশকে ঢেকে রাখা, মশারিয়াল ব্যবহার করা ইত্যাদি উপায় অনুসরণ করা
উচিত। ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে, বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে,
জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া এবং এন্টিবায়োটিক
বা ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ এড়াতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের নিয়মিত রক্তচাপ
ও রক্তের প্লাটলেট মাত্রা পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনে রক্ত বা স্যালাইন দেওয়া
উচিত। ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে আপনি নিচের পয়েন্ট
গুলো পড়ুন।
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয়
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর পর জ্বর হওয়ার সময় নির্ভর করে ডেঙ্গু ভাইরাসের ধরনের উপর।
সাধারণত, ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে অথবা গড়ে ৪ থেকে ৭ দিনের
মধ্যে জ্বর হয়ে থাকে। এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। এই জ্বর পাঁচ থেকে ছয়
দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হিসাবে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হতে পারে।
এছাড়াও শরির গা গরম লাগতে পারে। শরীরের হাতে পারে তীব্র ব্যথা ও কাঁপুনি। তবে, এই
সময়সীমা ও বিভিন্ন ব্যাক্তির বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর
হলে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
মশা তাড়ানোর উপায় গুলো কি কি
মশা তাড়ানোর উপায় অনেক রকমের আছে। সে উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলো
- লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার লেবুর ভেতরে লবঙ্গ গেঁথে দিয়ে ঘরের কোণায় রাখুন। এটি মশার গন্ধশক্তি কমিয়ে দেয়।
- নিমের তেলের ব্যবহার নিমের তেল ত্বকের জন্য ভালো এবং মশা দূরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে। নিমের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
- পুদিনার ব্যবহার ছোট গ্লাসে একটু পানি নিয়ে তাতে ৫ থেকে ৬ গাছি পুদিনা রেখে দিন খাবার টেবিলে। ৩ দিন অন্তর পানি বদলে দেবেন। পুদিনা পাতা ছেঁচে নিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানির ভাপ পুরো ঘরে ছড়িয়ে দিন। তাহলে পুদিনার গন্ধতে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় পালিয়ে যাবে।
- নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়ো ধুনোর সঙ্গে ব্যবহার করলে মশা দূরে থাকে।
- হলুদ বৈদ্যুতিক আলো ঘরের বৈদ্যুতিক আলোটি হলুদ সেলোফেনে জড়িয়ে দিন। হলুদ আলো মশা পছন্দ করে না।
- চা-পাতা পোড়ানো ব্যবহৃত চা-পাতা রোদে শুকিয়ে নিন। এই চা পাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় ঘরের সব মশা পালিয়ে যাবে।
- নিমপাতা পোড়ানো নিমপাতা পোড়ানো ধোঁয়ায় মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় দূরে থাকে।
এছাড়াও আপনি কিছু গাছ বা ফুল রাখতে পারেন যেগুলো মশা দূরে রাখে। যেমন,
ল্যাভেন্ডার, গাঁদা, সিট্রোনেলা ঘাস, রোজমেরী ইত্যাদি। এই প্রাকৃতিক উপায়গুলো
ব্যবহার করে আপনি মশাকে দুরে রাখতে পারেন। আশা করি আপনার কাছে এই তথ্যগুলো
উপকারী হবে।
এই উপায়গুলো প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না তবে, এই উপায়গুলোর
কার্যকারিতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হতে পারে এবং সব সময় নিরাপদ না হতে
পারে। তাই, যেকোনো নতুন উপায় অনুসরণ করার আগে স্বাস্থ্য পেশাদারের সাথে
পরামর্শ করা উচিত।
মশা ও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ কি
মশা ও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ হলো সেই রোগগুলি, যেগুলি মশার কামড়ে মানুষের শরীরে
জীবাণু বা ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যমে হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি
রোগের কথা জানা যায়। এই রোগ গুলো হলো ম্যালেরিয়া এই রোগটি একটি জীবাণুজনিত রোগ,
যা স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
এই রোগে
জ্বর, ঠান্ডা, শরীরের ব্যথা, বমি বমি ভাব, হাত-পা শিথিলতা এবং রক্তাল্পতা হয়।
ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায় প্রচলিত। ফাইলেরিয়া এই রোগটি
একটি নেমাটোড কীটজনিত রোগ, যা কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই
রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে ওঠে।
আরো পড়ুনঃ
কি খেলে রক্তে প্লাটিলেট বাড়ে
একে গোদ রোগও বলা হয়। বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়া আক্রান্ত রোগী দেখা
গিয়েছে। ডেঙ্গু এই রোগটি একটি ভাইরাল রোগ, যা এডিস মশার দুইটি ধরনের প্রজাতি
রয়েছে যেমন, এডিস ইজিপ্টি ও অ্যালবোপিকটাস, এই প্রজতি গুলো ডেঙ্গু ভাইরাসের
জীবাণু ছড়ায়। এই রোগে তীব্র জ্বর, শরীরের ব্যথা, পেটে ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা
এবং শরীরজুড়ে র্যাশ হয়।
ডেঙ্গু রোগ বাংলাদেশের সবগুলো জেলায় প্রচলিত আছে। চিকুন গুনিয়া এটি একটি ভাইরাল
রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে জ্বর, শরীরের ব্যথা, সঙ্গে সঙ্গে
স্নায়ুবিক দুর্বলতা হয়। চিকুন গুনিয়া বাংলাদেশের অনেকগুলো জেলায় প্রচলিত আছে।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস এটি একটি ভাইরাল রোগ, যা কিউলেক্স মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
এই রোগে মানুষের মস্তিষ্কে সংক্রমণ হয়, যা মৃত্যু বা পঙ্গুতা ঘটাতে পারে।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস বাংলাদেশের বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ,
রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট জেলায় প্রচলিত। এছাড়াও মশা থেকে আরো কিছু রোগ ছড়ায়,
যেমন জিকা, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, লা ক্রস এনসেফালাইটিস, ইয়োলো ফিভার ইত্যাদি।
এই রোগগুলো বাংলাদেশে তুলনামূলক কম প্রচলিত। এই রোগগুলো
মানুষের
জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা
বাড়ানো খুবই জরুরি। আর মশার কামড়ে যদি আপনার কোনো জ্বর আসে সে ক্ষেত্রে আপনার
একজন ভালো ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
মশা মানুষের শরিরের কি ক্ষতি করতে পারে
মশার
শরিরের
ক্ষতি বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। মশার কামড় থেকে রক্ত শোষণ করে মানুষের শরীরে
বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ করে বিভিন্ন রোগ তৈরি করে থাকে। যেমন ডেঙ্গু,
ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ইয়োলো ফিভার, জাপানি ইনসেফালাইটিস ইত্যাদি।
এছাড়াও মশার কামড় থেকে মানুষের শরীরে অ্যালার্জি, চুলকানি, সমস্যা,
ব্যথা বা সংকোচন হতে পারে। মশার কামড় এড়াতে মানুষেরা বিভিন্ন ধরণের রিপেলেন্ট
বা মশা বিতাড়নের পণ্য ব্যবহার করে, যেমন কয়েল, স্প্রে, ক্রিম, ব্যাট, মশারি
ইত্যাদি। কিন্তু এই পণ্য গুলোর মধ্যে কিছু পণ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে। যদি তারা অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহার
করে।
এই ধরণের পণ্য ব্যবহার করলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের অসুখ, কিডনি
রোগ, চোখ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই মশার কামড় এড়াতে পণ্য বাছাই
করতে হবে সতর্কতার সাথে। মশার কামড় এড়াতে কিছু সহজ ও স্বাভাবিক উপায় রয়েছে।
যেমন ঘরের চারদিকে পানি জমা না রাখা, পুষ্পদানি, কুলি, ট্যাঙ্কি ইত্যাদি
পরিষ্কার রাখা,
ঘরের জানলা বন্ধ রাখা, মশার কামড় এড়াতে সহায়ক কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
করা, যেমন লেবু, তুলসি, নিম, লবঙ্গ, পুদিনা ইত্যাদি। এছাড়াও মশার কামড় থেকে
রক্ষা করতে পারে কিছু রং, যেমন নীল, সবুজ, বেগুনি এবং সাদা এই সব রংঙের লাইট
ঘরের ভিতরে ব্যবহার করা। এই রঙ গুলো মশার সাড়া দেয় না।
আরো পড়ুনঃ
ত্বকের চুলকানি দুর করার সহজ উপায়
তাই মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে এই উপায়গুলো আপনি অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি
আপনার কাছে এই তথ্যগুলো উপকারী হবে। আর যদি আপনার মশার কামড়ে জ্বর কিংবা অন্য
কোনো রোগ বেশি দিন হয়ে থাকে তবে খুব দ্রুত তখন ডাক্তারের কাছে যাবেন।
লেখকের শেষ কথা
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url