দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত ও সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা এসব সম্পর্কে বিভিন্ন ধরণের নতুন তথ্য পেতে হলে এই পোষ্টের সাথে থাকুন। তাহলে আপনি খেজুর সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য আপনি জানতে পারবেন।
দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে ভালো খেজুরের নাম ও খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়। এসব সম্পর্কে কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। সেই সব পয়েন্ট গুলো আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়েন। তাহলে আপনি খেজুর সম্পর্কে আরো অনেক ধরনের বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।

ভুমিকা

খেজুর হল এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষের ফল, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশি চাষ করা হয়। খেজুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ফাইবার এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান। খেজুর রক্তচাপ, রক্তস্বল্পতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস,


হৃদরোগ ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই খেজুরের বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানত মরু ভুমি এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারি আকারের

গাছ হিসেবে খেজুর গাছের উচ্চতা গড়পড়তা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে যা পাখির পালকের আকৃতিবিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতাগুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। এক বা একাধিক বৃক্ষ কাণ্ড রয়েছে যা একটিমাত্র শাখা থেকে এসেছে। পুষ্টি উপাদান খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ।

এটা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আপনি খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন খেজুর রাখতে পারেন। আপনি যদি খেজুরের উপকারিতা বা খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আরও জানতে চান। তাহলে আপনি নিচের পয়েন্ট গুলো ভালো করে পড়ুন।

দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

দিনে বেশ কয়েকটি খেজুর খাওয়া উচিত কারণ খেজুর হলো একটি পুষ্টিকর ফল যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে এটি খুব মিষ্টি হওয়ায় বেশি খেলে ওজন বাড়তে পারে। তবে খেজুর খাওয়ার পরিমাণ ব্যক্তির স্বাস্থ্য অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণত প্রতিদিন 100 গ্রাম খেজুর বা এক হাতের মুঠো খেজুর খাওয়া উচিত।

এই পরিমানটি প্রায় মাত্র ৪ থেকে ৫টি খেজুর হতে পারে। এতে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরি, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পাবেন। আপনি প্রায় প্রতিদিন খেজুর খেলে খেজুরে আপনার সম্পর্কিত স্বাস্থ্যগত সুবিধা প্রদান করতে পারে। এটি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত।

খেজুরে বিশেষভাবে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং গুলুকোজ রয়েছে। যা আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। তবে দিনে খেজুর খাওয়ার একটি পরিমাণ নির্ধারন করতে হবে। তবে একটি দিক খেয়াল রাখতে হবে যে অতিরিক্ত খেজুর যেন না খাওয়া হয়। আশা করি আপনার কাছে এই তথ্যগুলি উপকারী হবে।

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়

খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরে অনেক উপকার হয়। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরে ভরপুর এনার্জি থাকে এবং সারাদিন সতেজ অনুভব করা যায়। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, তাই এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং দেহকে এনার্জিতে ভরিয়ে তোলে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে শক্তি, প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,


ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীরের হজম ভাল করে, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, বিভিন্ন রোগ থেকে প্রতিরোধ করে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে। তবে খেজুর খাওয়ার আগে খেজুর কে সারারাত ভিজিয়ে রাখলে আরো ভালো হয়।

ভিজিয়ে রাখলে খেজুরের পুষ্টি উপাদান বাড়ে এবং শরীর সেগুলো সহজে শোষণ করতে পারে। সকালে উঠে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা খেজুর খেলে আপনি সারাদিন সতেজ অনুভব করবেন। এছাড়াও খালি পেটে খেজুর খেলে যা হয় সেগুলো হলো-

  • শক্তি প্রাপ্তি খেজুরে প্রাকৃতিক শর্করা ও ফাইবার থাকে, যা শরীরের শক্তি প্রাপ্তি করে।
  • পাচনা সুস্থ খেজুরে ফাইবার ও প্রিবায়োটিক থাকে, যা পাচনা সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • ক্যালোরি সাপ্লাই খেজুর একটি উচ্চ ক্যালোরি খাবার, যা খালি পেটে খেলে শরীরের ক্যালোরি সাপ্লাই বাড়াতে সাহায্য করে।

মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, খেজুর মিষ্টি এবং উচ্চ ক্যালোরি আছে, তাই এটি মাত্র মাধ্যমিক পরিমাণে খেতে ভালো। তবে আপনি যদি অতিরিক্ত খেজুর খান তার আগে আপনি স্বাস্থ্যসম্মত চিকিৎসকের কছে পরামর্শ নিন।

কোন খেজুর সবচেয়ে ভাল

খেজুর একটি অত্যন্ত স্বাদু ফল। এটি প্রাকৃতিক মিষ্টি, স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর ফল। কোন খেজুর সবচেয়ে ভাল এই প্রশ্ন টি একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন না। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের খেজুর চাষ হয় এবং সেগুলোর স্বাদ, আকৃতি, রঙ, পুষ্টিগুণ ও মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

কেউ কেউ মিষ্টি স্বাদের খেজুর পছন্দ করেন, কেউ কেউ নরম বা শুকনো খেজুর। তাই সবচেয়ে ভালো খেজুর নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।তবে বিশ্বের কিছু জনপ্রিয় খেজুরের নাম এবং তাদের বৈশিষ্ট্য আমি আপনাকে বলতে পারি। এগুলো হলো-

আজওয়া খেজুর দেখতে কালো, নরম এই খেজুর খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ। মূলত সৌদি আরবের মদিনাতে এই খেজুর চাষ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এই খেজুর পছন্দ করতেন। এই খেজুর হৃদপিন্ডকে সক্রিয় রেখে হার্ট অ্যাটাক রোধ করে। এতে থাকা ভিটামিন বি ও ম্যাগনেশিয়াম হার্টের জন্য উপকারি। এই খেজুরে ক্যালসিয়াম ও

ফসফরাস থাকে অনেক, তাই এটি হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে। এতে গুলুকোজ, ফ্রুকটোজ, সুক্রোজ থাকে অনেক, তাই শরীরে শক্তি বাড়ায় এই খেজুর। এতে গ্লিসেমিক ইনডেক্স কম, তাই ডায়াবেটিক রোগীরাও এই খেজুর খেতে পারেন। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় এই খেজুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

মেজুল খেজুর বিশ্বের একটি জনপ্রিয় খেজুর বলা যায় মেজুল খেজুর কে। মূলত মরক্কোতে চাষ হয় এই খেজুর। বর্তমানে আমেরিকাসহ অনেক দেশেই এই খেজুর পাওয়া যায়। বড় আকারের বাদামী রঙয়ের এই খেজুরে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল আছে অনেক। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, হজমে সহায়ক। মস্তিষ্ক ও হাড়ের জন্য উপকারি এবং খেতেও সুস্বাদু খেজুরটি।

ওমানি খেজুর এই আরেকটি বড় আকারের রসালো মিষ্টি স্বাদের খেজুরের নাম ওমানি। মূলত এই খেজুর টি ওমানেই চাষ হয়ে থাকে। এতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন থাকে প্রচুর।

ডেগলেট নূর খেজুর আলজেরিয়াতে চাষ হয় মাঝারি আকৃতির কিছুটা বাঁকা দেখতে খেজুরটি। তবে খেজুরটি অনেক মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এতে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংক থাকে অনেক। সূর্যের আলোতে ধরলে এই খেজুরের ভেতরটা সোনালী দেখায়। খেজুরের রাণী বলা হয় এই খেজুরকে।


মাশরুক খেজুর সবচেয়ে ভাল খেজুর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধরনের খেজুর সাধারণত কঠিন, চকচকে, মিষ্টি এবং বাজারে সহজে পাওয়া যায় এগুলো প্রাকৃতিক চিনি, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং খনিজ সম্পন্ন এবং এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে পূর্ণ রাখে। যা এগুলোকে কঠোর ডায়েটের জন্য উপযুক্ত করে।

সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কারণ খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি, ভিটামিন ও মিনারেল এবং খেজুর ওজন কমানোর জন্যও উপকারী। নিচে সে উপকারিতা দিক গুলো দেওয়া হলো-

  • সকালে খেজুর খেলে আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে থাকে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে।
  • সকালে খেজুর খেলে রক্তশূন্যতা রোধ করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং আয়রন রয়েছে।
  • সকালে খেজুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ফাইবার এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে।
  • সকালে খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া রোধ করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন রয়েছে।
  • খেজুর হাড়, দাঁত, চোখ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন A ও B রয়েছে।
  • খেজুরের ফাইবার আপনার পাচন স্বাস্থ্য উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও খেজুর খাওয়ার পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কারণ এতে অনেক শর্করা রয়েছে। সেজন্য ব্যায়াম করার কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে এটি খেলে দেহে সহজে ক্লান্তি আসে না। এছাড়াও খেজুর খাওয়ার পর ব্যায়াম করলে পেট থেকে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। সকালে খেজুর খাওয়ার জন্য ভালো হবে ভেজা খেজুর খাওয়া। এতে করে শরীরের পানির স্তর বজায় রাখা যায়।

শেষ কথা

আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url