গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় ও গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ এই সব
ধরণের বিভিন্ন তথ্য গুলো জানতে হলে আপনি এই আটিকেলটি পড়ুন। তাহলে আপনি এই পোষ্টের
বিভিন্ন বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে মেয়েদের গর্ভাবস্থা সম্পর্কে আরো কিছু পয়েন্ট
যোগ করা হয়েছে। সে পয়েন্ট গুলো আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে
পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি গর্ভাবস্থা সম্পর্কে কিছু অজানা বিষয় গুলো জানতে
পারবেন।
ভুমিকা
গর্ভাবস্থা একটি অভিজ্ঞতা যেখানে একটি নতুন জীবন মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। আর গর্ভাবস্থা একজন
মহিলার জীবনে অন্যরকম সুখ নিয়ে আসে। একজন মহিলার জীবন নয় মাসের জন্য পরিবর্তিত
হয়। এই সময়ে, মহিলা বেশ কয়েকটি লক্ষণ এবং উপসর্গ অনুভব করে।
আরও পড়ুনঃ
ওষুধ ছাড়ায় ডায়বেটিস কমানের উপায়
গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে, মহিলা জানে না যে সে গর্ভবতী। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তার
মহিলার শেষ মাসিক চক্রের তারিখ নিশ্চিত করে এবং গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। কিছু
ক্ষেত্রে, একজন মহিলা বিলম্বিত মাসিক গর্ভাবস্থা বলে গুলিয়ে ফেলতে পারে। তাই
গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
যখন পুরুষের শুক্রাণু মহিলা ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, তখন একটি ভ্রূণ তৈরি হয় এবং
মহিলা গর্ভবতী হয়। গড়ে একজন মহিলা তার শেষ পিরিয়ড শুরুর ৮ থেকে ১০ মাস পর একটি
সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে। আজকের নিবন্ধে, আমরা গর্ভাবস্থার কথা বার্তা নিয়ে আলোচনা
করবো।
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
গর্ভাবস্থায়
বেশি শুয়ে থাকলে কিছু সাধারণ পরিস্থিতি ঘটতে পারে। এই সময়ে মায়ের শরীরে
অনেক পরিবর্তন ঘটতে থাকে সে গুলো হলো হাড়ের স্থান পরিবর্তন, হাড়ের সংখ্যা
বা স্থান পরিবর্তন, হাড়ের সংকোচন, মায়ের শরীরের ওজন বৃদ্ধি। আবার
গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমন-
- শরীরের পানির স্তর কমে যাওয়া।
- রক্তচাপ বাড়া।
- শ্বাসকষ্ট সমস্যা করা।
- পেটের বাচ্চার অসুস্থতা দেখা দেওয়া।
- গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়।
এই সমস্যাগুলো এড়াতে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চলাচল করা উচিত। শুয়ে থাকার সময়
বুকের উপর শুয়ে থাকা ভালো না। বাম বা ডান পাশে শুয়ে থাকা ভালো। দেহের উপরের
অংশ সামান্য উচুতে রাখতে শুয়ে থাকার সময় কুশন ব্যবহার করা সহায়ক হতে পারে।
আশা করি এই তথ্য গুলো আপনাদের
গর্ভাবস্থার সময় কাজে লাগবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকার ফলাফল
নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিন্তু সাধারণত এটি বাচ্চার উপর কোনো প্রভাব
ফেলে না। তবে, গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে মায়েদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের
ব্যাথা হতে পারে।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক শরীরিক কাজকর্ম এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা
সুস্থ গর্ভাবস্থা এবং সুস্থ শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যেকোনো
পরিস্থিতিতে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে
স্বাস্থ্য চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা নিষেধ
গর্ভাবস্থায় প্রায় অনেক ধরনের কাজই করা নিষেধ করে থাকে ডাক্তারে। তবে সে কাজ
গুলো নিচে কিছু দেওয়া হলো ভারী কোন জিনিস তোলা, উপরে হয়ে বা ঝুঁকে কাজ করা,
উঁচু জুতা পরা, একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা পা ঝুলিয়ে বসে থাকা, টাইট
ফিট জামা-কাপড় পরা, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া, পেটে চাপ পড়বে এমন কাজ
না করা।
এছাড়াও কাঁচা মাছ, মাংস, ডিম বা অন্য কোন কাঁচা খাবার খাওয়া যাবে না। মাছ,
মাংস, ডিম বা অন্য কোন খাবার ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করে খেতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। এছাড়াও শারীরিক শ্রম ও
অতিরিক্ত শক্তির কাজ যেমন গর্ভাবস্থায় শারীরিক শ্রম করা নিষেধ।
আরও পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় কি খেলে শরিরে রক্ত বাড়ে
এটি আপনার শরীরের অতিরিক্ত শক্তি ও স্বাস্থ্য উপকারে অসুবিধা সৃষ্টি করতে
পারে। গর্ভাবস্থায় উপযুক্ত খাবার নিষেধ করা উচিত। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ
অনুসরণ করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিন। গর্ভাবস্থায় ধূমপান ও মাদক পদার্থ
ব্যবহার নিষেধ।
এটি আপনার
শিশুর
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ভারী কাজ করা
নিষেধ। আপনি যোগাযোগ করার সময় সাবধান থাকুন। আর যে কোন শারীরিক সমস্যার জন্য
ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এবং গর্ভাবস্থায় করনীয় কিছু কাজ হলো
- প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, অনেক রকমের কালার ফুল ফল, শাক-সবজি এবং বেশি পরিমাণে পানি রাখতে হবে।
- হাসিখুশি এবং টেনশনমুক্ত থাকতে হবে।
- ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে।
- যথাযথ ব্যায়াম এবং বিশ্রাম করতে হবে।
- এই সময়ে মহিলাদের সবসময় হাসিখুশি এবং টেনশনমুক্ত থাকা অনেক জরুরি।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায়
ফল
খাওয়া আপনার ও আপনার শিশুর জন্য ভালো। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের
জন্য কিছু ফল খাওয়া উচিত নয়। এই সময়ে আমরা অনেক রকমের ফল খেয়ে থাকি। তবে কিছু
ফল
আছে যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
চিকিৎসকদের মতে, গর্ভাবস্থায়
মাছ,
মাংস, ডিমের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ফল থাকে। তবে কিছু ফল আছে যা ক্ষতির কারণ
হতে পারে। সেজন্য আপনাকে কিছু ফল এড়াতে হবে এমন কিছু ফলের নাম হলো-
- আনারসে ব্রোমেলাইন নামক একটি এনজাইম থাকে। যা জরায়ুকে নরম করে এবং গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- আঙুরে রেজভেরট্রোল নামক একটি যৌগিক থাকে। যা আপনার হরমোনের ভারসাম্য ভাঙ্গা করতে পারে। এটি বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে খাওয়া উচিত নয়।
- আধা কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক একটি পদার্থ থাকে। যা জরায়ুতে সংকোচন এবং গর্ভপাতের কারণ হতে পারে । পেঁপে খাওয়ার পর আপনি পেট ব্যথা বা বমি বমি অনুভব করতে পারেন।
- তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি আপনার দেহে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনকে দমন করতে পারে। এবং প্রজেস্টেরনের নিম্ন স্তরের ফলে গর্ভপাত হতে পারে। অকাল প্রসব হতে পারে এবং এমনকি ভ্রূণের কোষের ক্ষতি হতে পারে।
- হিমায়িত ফলে সংরক্ষক ব্যবহার করে স্থায়ীত্ব বাড়ানো হয়। যা আপনার ও আপনার শিশুর জন্য বিষাক্ত হতে পারে । এছাড়াও, হিমায়িত ফল তাজা নয় এবং এতে কীটনাশক বা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
এই ফলগুলোর পাশাপাশি, আপনার যে কোনো ফল খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
আপনি যদি কোনো ফলের প্রতি এলার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকেন। তবে সেগুলো এড়ানো
আপনার জন্য ভালো হবে। আরও কোনো সমস্যা থাকলে আপনি একটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের
সাথে আলোচনা করুন।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় মেয়েরা সবথেকে কঠিন সময় পার করে থাকে। বিশেষত গর্ভাবস্থার শেষের
দিকটা অনেকটাই ক্রিটিক্যাল হয়ে থাকে। এই সময়ে মেয়েদের অনেক কিছু বেছে খেতে
হয় বা বুঝে শুনে চলতে হয়। তাই আপনার নিকটস্থ কোনো চিকিৎসকের সাথে আলাপ করে
জানতে পাড়েন গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না।
কেননা কিছু খাবার আছে গর্ভাবস্থায় খেলে উপকার পাওয়া যায় আবার কিছু খাবার
পরিহার করা উচিত। তবে গর্ভাবস্থায় কিছু সবজি খাওয়া উচিত নয় কারণ সেগুলো
আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সবজিগুলো হলো-
- কাঁচা আঙ্গুর এতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা গর্ভে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
- বেগুন এতে টক্সোপ্লাজমোসিস নামক এক ধরনের পরজীবী থাকে যা গর্ভপাত বা শিশুর বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- কাঁচা পেঁপে এতে ল্যাটেক্স নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা গর্ভজাত শিশুর ক্ষতি করে।
- সজিনা এতে আলফা সিটেস্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান থাকে যা গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
- এলোভেরা এতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা গর্ভপাত বা শিশুর জন্মের সময় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- না ধোয়া সবজি ও ফল এতে ক্ষতিকারক কীটনাশক, হার্বিসাইড এবং মারাত্মক প্যাথোজেন থাকতে পারে যা গর্ভে ইনফেকশন বা শিশুর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এছাড়া আপনি গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের কাঁচা শাকসবজি, আনারস, করলা, ক্লোভার,
আলফালফা, হারবাল চা ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এগুলো আপনার গর্ভকালীন
সময়ে অনেক ক্ষতি করতে পারে। আরও কিছু সবজি রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত
নয়।
আরও পড়ুনঃ
জ্বর হলে মানুষের কি কি করণীয়
তাই, গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার আগে সবসময় নিশ্চিত হওয়া উচিত যে সে সবজিটি
আপনার গর্ভবস্থায় খাওয়া নিরাপদ কি না। আর আপনার যদি গর্ভাবস্থায় ফল, শাক-সবজি
খাওয়ার পর কোন সমস্যা দেখা দেয়। তবে আপনি তখন খুব দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে
পরামর্শ নিবেন।
শেষ কথা
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url