কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি
কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি ও কোন মাছ চাষে লাভ বেশি এই সব সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের
বিষয় গুলো জানতে হলে আপনি এই পোষ্টটি পড়ুন। এবং কোন ধরনের মাছে ক্যালসিয়াম বেশি
এই সব বিষয় গুলো আপনি জানতে পারবেন।
এই পোষ্টের নিচের দিকে আপনার জন্য মাছ সম্পর্কে কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। সে
পয়েন্ট গুলো আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে মনোযোগ সহকারে পড়েন। আশা
করি তাহলে আপনি মাছ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য গুলো বুজতে পারবেন।
ভুমিকা
মাছ হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার যা আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গাতে প্রচুর
পরিমাণে পাওয়া যায়। আমাদেরকে মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। মাছ উৎপত্তিস্থল
অনুযায়ী দুই ধরনের (মিঠা পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ) হয়ে থাকে। মিঠা পানির মাছ
সাঁতার কাটছে রেড লায়নফিশের সম্মুখ দৃশ্য বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসে আগনাথা,
প্লাকোডার্মি,
আরও পড়ুনঃ
কখন কলা খাওয়া উচিত নয়
কনড্রিকথিস, অ্যাক্টিনোপ্টেরাইগি, সার্কোপ্টেরাইগি এবং টেট্রাপোডা মাছের মধ্যে
পড়ে। সামুদ্রিক মাছ সমুদ্রের লোনা জল এবং স্বাদু জলের খাল, বিল, হাওর, বাওর,
নদী, হ্রদ, পুকুর, ডোবায় বাস করে। পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে শুরু করে মহাসাগরের গহীন
অতল স্থানে, অর্থাৎ যেখানেই জল রয়েছে সেখানেই মাছের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়।
পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র মাছ মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মাছ মানবদেহে
অন্যতম আমিষ যোগানদাতা। আমাদের দেশে প্রায় অনেক স্থানেই বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ
করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিনোদন হিসাবে ছিপ বা বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আবার মাছকে
অ্যাকুয়ারিয়ামে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। মাছ প্রায়শই আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত হয়
এবং পাখনা দিয়ে চলাচল করে। মাছ শীতল রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডী প্রাণী হয়। মাছ পৃথিবীর সব ধরনের জলে পাওয়া যায়। মাছ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস
হিসেবে কাজ করে। মাছ চাষ করে মানুষ অর্থ উপার্জন করে এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা
করে।
কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি
ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মাছের মধ্যে রয়েছে- ইলিশ, মলা, কাচকি, ফলি, চিংড়ি, কৈই,
পাঙ্গাশ ইত্যাদি। এই মাছগুলিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ১০০
মিলিগ্রাম থেকে ৮০০ মিলিগ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে। আপনি যদি ক্যালসিয়ামের
ঘাটতিতে ভুগে থাকেন।
তবে আপনি এই মাছগুলিকে আপনার খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই মাছ
গুলিকে বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খেতে পারেন। আপনি এগুলিকে ভাজা, সিদ্ধ, গ্রিল
বা মাছ ভুনা করে খেতে পারেন ভাত ও রুটির সাথে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ
অন্যান্য খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ, দই, পনির, সয়া দুধ, সবুজ শাকসবজি, বাদাম
বীজ, সাইট্রাস ফল,
কলা, ডিম, মাশরুম ইত্যাদি। সার্ডিন প্রতি পরিবেশনে প্রায় ৩৫১ মি.লি. গ্রাম
ক্যালসিয়াম সম্পর্কিত এটি একটি অত্যন্ত উচ্চ উৎস। এটা হাড় সহ শরিরের বিভিন্ন
অংশকে শক্ত করতে সাহায্য করে। স্যামনে ক্যালসিয়ামের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এটি
হাড় এবং দাঁতের গঠন ও উন্নয়নে সাহায্য করে। আপনি যদি ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন
ডি সমৃদ্ধ খাবার
খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে না পারেন। তাহলে আপনি
একটি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। উপরে দেওয়া মাছগুলিতে
ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অনেক হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন এবং শক্তির জন্য
অপরিহার্য।
এটি রক্ত জমাট বাঁধা, পেশী সংকোচন এবং স্নায়ু সংকেত পরিচালনায়ও সহায়তা করে।
আপনি যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগেন তবে, আপনি এই মাছগুলিকে আপনার
খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কোনও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের
আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
কোন মাছ খেলে শরীরে রক্ত হয়
শিং হচ্ছে জিয়োল মাছ যা প্রায় অনেক মানুষেরই পছন্দের মাছ। তবে এই মাছ পছন্দের না
হলেও ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত সবাই হয়তো কম-বেশি খেয়েছেন এই মাছটি। কেননা
প্রচলিত রয়েছে যে, শিং মাছ খেলে শরীরে রক্ত (লোহিত কণিকা) বাড়ে। এ কথার ওপর
বিশ্বাস করেই অধিকাংশ মানুষ শিং মাছ খেয়ে থাকেন। একসময় শুধু নদী-নালা, খাল-বিল ও
পুকুরে পাওয়া যেত এ মাছ।
তবে বর্তমানে চাষের মাধ্যমে উৎপাদন করতে পারায় বাজারে প্রায় বছরেই পাওয়া যায় এই
মাছ। শরীরে রক্ত বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া উপকারী। মাছ এমন একটি
খাবার যা শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, শিং মাছ খেলে শরীরে রক্ত
বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী হয়। শিং মাছ প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং মেগা
থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
আরও পড়ুনঃ
কোন খেজুর সবচেয়ে ভালো
সমৃদ্ধ, যা শরীরে রক্ত বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সপ্তাহে অন্তত দুই
দিন শিং মাছ খাওয়া উচিত। তবে, এই সব খাবারের পাশাপাশি সঠিক পুষ্টিকর খাবার এবং
স্বাস্থ্যকর জীবনধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শরীরে রক্ত বাড়ানোর জন্য
মাছের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো শিং মাছ ও গড়য় মাছ। শিং ও গড়য় মাছে প্রচুর পরিমাণে
আয়রন, প্রোটিন,
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য খনিজ রয়েছে। যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন
বাড়াতে এবং রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। শিং ও গড়য় মাছ খেলে শরীরে রক্ত
বাড়ে এই কথার সত্যতা চিকিৎসকরাও সমর্থন করেন। তাই আপনি যদি রক্তশূন্যতা থেকে
মুক্তি পেতে চান তাহলে নিয়মিত শিং ও গড়য় মাছ খেতে পারেন। শিং ও গড়য় মাছ ছাড়াও
আপনি অন্যান্য
মাছ যেমন ইলিশ, রুই, কাতলা, পোমফ্রেট, সালমন, টুনা ইত্যাদি খেতে পারেন এই মাছ
গুলোতেও আয়রন এবং প্রোটিন রয়েছে। মাছের সাথে আপনি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডিম,
বাদাম, কিসমিস, কলা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারেন। এই গুলোতেও রক্ত বাড়ানোর
উপকারী উপাদান রয়েছে। এছাড়া আপনি পানি এবং ভিটামিন সি যুক্ত পানীয় যেমন
লেবুর রস, কমলার রস, আমের রস ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পান করতে পারেন। যা আপনার
শরীরের আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করবে। আশা করি আপনি এই তথ্যগুলো থেকে উপকৃত হবেন
এবং আপনার শরীরে রক্ত বাড়ানোর জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করবেন। যদি আপনার কোনো
সমস্যা বা সম্ভাবনা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
কোন মাছ চাষে লাভ বেশি
বিভিন্ন ধরনের মাছ বাণিজ্যিক ভাবে পুকুরে চাষাবাদ করা হয়। মাছ চাষে লাভ বেশি
হওয়ার জন্য আপনার কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। মাছ চাষের পদ্ধতি পানির পিএইচ ও
খামারির দক্ষতার উপর নির্ভর করে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি হবে। যেমন মাছের প্রজাতি,
পুকুরের আকার, পানির মাত্রা, খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, বাজারের চাহিদা ও মূল্য
ইত্যাদি।
এছাড়াও আপনার মাছ চাষের উদ্দেশ্য ও বাজেট ও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বিভিন্ন
ধরনের মাছ বাণিজ্যিক ভাবে পুকুরে চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু সব মাছ চাষে লাভ বেশি হয়
তা নয়। কিছু মাছের প্রজাতি আছে যেগুলো কম খরচে বেশি উৎপাদন করে এবং বাজারে ভালো
দাম পাওয়া যায়। এমন কিছু মাছের প্রজাতি হলো রুই, কাতলা, বৃগেট, সিলভার কার্প,
চিংড়ি, তেলাপিয়া, কই, শিং, মাগুর, পাবদা, ইত্যাদি। এই মাছগুলো বাংলাদেশের
জলবায়ুতে চাষ করা সহজ এবং লাভজনক। এই মাছগুলোর বাজারে চাহিদা ও মূল্য উচ্চ মানের।
এছাড়া এই মাছগুলো পুকুরের বিভিন্ন স্তরে বাস করে এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ
করে। তাই এই মাছগুলো চাষ করে আপনি বেশি লাভ করতে পারেন।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে এই মাছ গুলো উচ্চ চাহিদা রয়েছে এবং উৎপাদন ক্রমাগত বৃদ্ধি
পাচ্ছে। এই মাছ গুলো বাংলাদেশে প্রায় লাভজনক মাছ হিসাবে পরিচিত। আর এই মাছ গুলোর
উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উচ্চ ফলন ও ভালো আয়
পাওয়া সম্ভব হয়ে থাকে। মাছ চাষের জন্য সঠিক খাবার অন্যতম প্রধান শর্ত।
মাছ চাষে ৭০% এর বেশি খরচ হয় খাদ্য সরবরাহে। বাজারের খাদ্য এবং নিজে উৎপাদন করা
খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উচ্চ ফলন ও ভালো আয় পাওয়া সম্ভব। তবে, মাছ চাষের
উপযুক্ত সময় সম্পর্কে ধারণা রাখা মাছ চাষের প্রথম ধাপ। মাছ চাষ বর্তমানে খুবই
লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোন কোন মাছে বেশি এলার্জি আছে
এলার্জি হওয়ার কারণ বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত
কিছু ধরনের মাছে এলার্জি দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে। যেমন সামুদ্রিক
মাছ, সালমন, টুনা, ম্যাকরেল, সার্ডিন ইত্যাদি। এবং শেল ফিশ, যেমন চিংড়ি,
কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুক ইত্যাদি। এছাড়াও ইলিশ মাছ খেলে অনেক ধরনের মানুষের
এলার্জি হয়ে থাকে।
এই ধরনের মাছগুলো থেকে এলার্জি হলে তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া
অন্য কোন মাছে এলার্জি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।তবে মাছে এলার্জি হতে
পারে এবং এটি বিভিন্ন ধরণের এলার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। সাধারণত
সামুদ্রিক মাছে এলার্জি প্রতিক্রিয়া একই
আরও পড়ুনঃ
রাতে পেয়ারা খেলে কি হয়
রকম হবে এটা বলা যায় না, কারণ এলার্জির প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি
ভিন্ন হতে পারে। কিছু সামুদ্রিক মাছ, যেমন শ্রিম্প, টুনা, সালমন, হিলসা,
সার্ডিন, ম্যাকারেল, হাড়ডক, সার্ডিন ইত্যাদি এলার্জির কারণ হতে পারে।
সামুদ্রিক মাছে অ্যালার্জি হওয়ার কিছু সাধারণ প্রতিক্রিয়া হলো-
- শরীরে ক্ষুদ্র ব্রণের উত্থান।
- চোখে এবং ত্বকে চুলকানি।
- ক্লান্তি এবং নাক বন্ধ থাকার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত জনিত দুর্বলতা।
এই ধরনের মাছ খাওয়ার আগে আপনি যদি কোন মাছে এলার্জি অনুভব করেন, তবে মেডিক্যাল
পেশাদারের পরামর্শ নিন এবং আপনার সমস্যার সঠিক চিকিৎসা প্রদান করার জন্য
যোগাযোগ করুন। এলার্জির উপসর্গ যেমন হাঁচি, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, ব্যথা বা
শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে এই ধরনের এলার্জি সাধারণত খাবার পরে দেখা দেয়।
শেষ কথা
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url