দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায় ও দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় এই সব
ধরনের বিভিন্ন তথ্য গুলো পেতে হলে আপনি এই আটিকেলটি পড়ুন। তাহলে আপনি দাঁতের
বিষয়ের বিভিন্ন তথ্য গুলো বুজতে পারবেন।
এই পোষ্টের নিচের দিকে আপনার জন্য দাঁতের পোকা দুর করার উপায় সম্পর্কে নিচে কিছু
পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। আপনি যদি সে পয়েন্ট গুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে
পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি দাঁতের পোকা বা দাঁতের গর্ত দূর করা সম্পর্কে অজানা
কিছু তথ্য গুলো জানতে পারবে।
ভুমিকা
দাঁত হলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মুখের একটি অঙ্গ, যা খাদ্য চর্বণ ও কর্তনের কাজে
ব্যবহৃত হয়। দাঁতের বিভিন্ন প্রকার ও অংশ রয়েছে, যেমন কর্তন দাঁত, ছেদন দাঁত,
অগ্রপেষণ দাঁত, পেষণ দাঁত, আক্কেল দাঁত, মুকুট, মূল, এনামেল, ডেন্টিন, দন্তমজ্জা,
সিমেন্ট ইত্যাদি। দাঁতের যত্ন নিয়ে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা,
আরও পড়ুনঃ
বাচ্চা পেটে আসলে কি কি সমস্যা হতে পারে
টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা, পেশাদারী দাঁত পরিষ্কার করানো, দন্ত
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং দাঁতের রোগ ও ব্যথা থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসা
করানো উচিত। আপনি কি আরও কিছু জানতে চান দাঁত সম্পর্কে তাহলে আপনি এই আটিকেলটি
পড়ুন।
দাঁতের পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের পোকা দূর করার জন্য আপনি কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করতে পারেন। যেমন
- লবঙ্গ বা লবঙ্গের তেল দাঁতের পোকা লাগানোর জায়গায় রাখুন। এটি ব্যাথা ও সূজন কমাতে সাহায্য করে।
- লেবুর রস ও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি দাঁতের পোকা লাগানোর জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। এটি দাঁতের জীবাণু ও ক্ষয় দূর করে।
- কালো মাজন বা কালো জিরা দাঁতের পোকা লাগানোর জায়গায় রাখুন। এটি দাঁতের পোকা শুকিয়ে ফেলে ও ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
- গরম লবণ পানি দিয়ে দাঁত কুলকুচি করুন। এটি দাঁতের পোকা ও সূজন কমাতে এবং দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, আপনি দাঁতের পোকা দূর করার জন্য কিছু মেডিসিন বা পেস্ট ব্যবহার করতে
পারেন। যেমন LANBENA Teeth Whitening Mousse এই মেডিসিন দাঁতের কালো দাগ, হলুদ
ভাব,
রক্ত পড়া, দাঁতের নিচে কালো দাগ ও দাঁতের ক্ষয় দূর করে। তবে, দাঁতের পোকা বাড়লে বা
ব্যাথা
বেশি হলে একজন ডেন্টিস্টের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিবেন।
তুলসী পাতা ১৫ টি বা ২০ টি তুলসী পাতা নিয়ে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে পেস্ট
বানিয়ে নিন এবং সেটা দিয়ে নিয়মিত ব্রাশ করুন। এভাবে দাঁতের গোড়ায় কালো দাগ
দূর করা যায়।
লেবু
ও অ্যালোভেরা এই দুইটা উপাদানের সাথে আধা কাপ বেকিং সোডা ও পরিমাণ মতো পানি
নিয়ে চার চা চামচ এলোভেরা জেল ও এক চামচ পাতি লেবুর রস নিয়ে
সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবং নিয়মিত এই পেস্ট
ব্যবহার করলে আপনি পরিষ্কার ও ঝকঝকে দাঁত পাবেন। দাঁতের পোকা দূর করার উপায়
সম্পর্কে আরও জানতে আপনি ডেন্টিষ্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আবার পুষ্টিকর
খাবার খাওয়া এবং ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার
খাদ্যতালিকায় রাখা দাঁতের ক্ষয় রোধে কাজ করে। আশা করি এই উপায়গুলো আপনার
কাজে লাগবে। তবে, এই সব উপায় ব্যবহার করার পাশাপাশি নিয়মিত ডেন্টিষ্টের
পরামর্শ নিতে হবে। যদি দাঁতের পোকা বা ব্যাথা বাড়ায় তাহলে অবিলম্বে
ডেন্টিষ্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
পোকা দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায়
পোকা দাঁতের
ব্যথা কমানোর উপায় অনেক রয়েছে, যেমন লবঙ্গ ও লবণ তেল দাঁতের জন্য মাজন বা পেস্ট ব্যাবহার করা।
লবঙ্গ বা লবণ তেল দাঁতের স্নায়ুকে অবস করে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক
গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে মুখে নিয়ে ১ মিনিট রাখুন। লবণ
পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ফাঁকে
জমে থাকা ব্যাক্টেরিয়া ও খাদ্যকণা সরিয়ে ফেলে এবং দাঁতের পোকা থেকে রক্তস্রাব
কমাতে সাহায্য করে। এই ভাবে আপনি দুই থেকে তিন বার কুলি করলে আপনার দাঁতের
ব্যাথা কমে যাবে। বরফ বা হিমায়িত শয়া দাঁতের বাইরে রাখা। বরফ বা হিমায়িত
শয়া দাঁতের বাইরে রাখলে রক্তনালী সংকোচিত হয় এবং ব্যথা ও প্রদাহ কমে যায়।
রসুন বা রসুনের রস দাঁতে লাগানো। রসুন বা রসুনের রস দাঁতে লাগালে রসুনের
এন্টিবাকটেরিয়াল ও এন্টিইনফ্লামেটরি গুণ দাঁতের পোকা ও ব্যথা দূর করতে সাহায্য
করে । আবার ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট দাঁতে লাগানো। ভ্যানিলা এক্সট্রাক্ট দাঁতে
লাগালে ভ্যানিলা এর এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এনালজেসিক গুণ দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ
কমাতে সাহায্য করে ।
- এছাড়াও কয়েকটি লবঙ্গ এবং গোলমরিচ পেস্ট করে নিন। ব্যথার স্থানে মিশ্রণটি থেকে অল্প একটু লাগিয়ে রাখুন। তাহলে আপনার দাঁতের ব্যাথা কমে যাবে।
- পেয়ারা পাতার রস ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগালে আপনার দাঁতের ব্যাথা কমে যাবে।
- পেঁয়াজের রস ব্যথাযুক্ত স্থানে লাগালে আপনার দাঁতের ব্যাথা কমে যাবে।
তবে দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, মিষ্টি ও অম্লযুক্ত
খাবার এড়ানো, ফ্লোরাইড যুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা। এবং ডেন্টিস্টের কাছে
নিয়মিত পরীক্ষা করানো ইত্যাদি করা উচিত। তবে, যদি আপনার দাঁতের ব্যথা স্থায়ী
হয় বা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না
তবে অবিলম্বে একজন ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত। এই উপায়গুলি আপনার দাঁতের
ব্যথা কমানোর জন্য সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি ব্যথা তীব্র হয় অথবা
দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে আপনার ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দাঁতের গর্ত দূর করার ঘরোয়া উপায়
দাঁতের গর্ত হতে পারে নানা কারণে, যেমন দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজের মাধ্যেমে
হতে পারে। দাঁত ভেঙে গিয়ে গর্ত হওয়ার কারণে হতে পারে। বা রুট ক্যানেল চিকিৎসার
করার জন্য গর্ত হতে পারে। দাঁতের মধ্যে যদি গর্ত বা ক্যাভিটি হয় তবে সেখাতে তখন
ময়লা, খাদ্যকণা ইত্যাদি জমে, সংক্রমণ হয়। দাঁতে ব্যথা হলে শিরশির অনুভূতি শুরু
হয় থাকে।
শিশুদের
এই গর্ত বা ক্যাভিটি হলে শিশুরা ব্যথায় অনেক কষ্ট পেয়ে থাকে। এবং শিশুরা কিছু
খেতে গেলেই তাদের দাঁত শিরশির করে ওঠে। দাঁতের গর্তের অন্যতম কারণ দন্তক্ষয় বা
ডেন্টাল ক্যারিজ। ডেন্টাল ক্যারিজ প্রাথমিক অবস্থায় খুবই ছোট কালো গর্তের মতো
দেখায়। এ অবস্থায় কোনো ব্যথা বা অসুবিধা না থাকায় রোগীরা, বিশেষ করে
শিশুরা বুঝতে পারে না যে গর্ত তৈরি হচ্ছে। জটিলতা হওয়ার পরই কেবল ধরা পড়ে। তবে
দাঁত ভেঙে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী সেটা বুঝতে পারে। এ ছাড়া রুট ক্যানেল
চিকিৎসার পর রোগী যদি পরসেলিন ক্রাউন বা মুকুট পরে না নেয়,
তবে গর্ত বেড়ে যায়। পরে রুট ক্যানেল এবং ভেতরের জিনিসপত্র সব বেরিয়ে আসে।
দাঁতের গর্ত হলে করণীয় হচ্ছে একজন দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গর্ত ভর্তি বা ফিলিং
করানো। এটি দাঁতের ক্ষয় ও সংক্রমণ রোধ করে। ঘরোয়া উপায় হিসেবে আপনি নিচে
দেওয়া কাজগুলো কিছু অনুসরণ করতে পারেন।
- দাঁত ব্রাশ করার পর মাউথওয়াশ ব্যবহার করা।
- দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ডেন্টাল ফ্লস দিয়ে পরিষ্কার করা।
- কাপে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে ১ বা ২ চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিয়মিত কুলি করা।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল খাওয়া। যেমন পাতিলেবু, কমলা লেবু, আমলকি ইত্যাদি খাওয়া।
- নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁতন করা।
- চিনিযুক্ত পানীয়, অম্লযুক্ত খাবার, কফি, ধূমপান ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।
এই ঘরোয়া উপায় গুলো দাঁতের গর্ত প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এগুলো
কোনো চিকিৎসার বিকল্প নয়। তাই আপনার দাঁতের গর্ত হলে অবশ্যই একজন দাঁতের
চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
দাঁতের যন্ত্রণা হলে কি করতে হবে
দাঁতের যন্ত্রণা হলে প্রায় অনেক ধরনের কাজই করতে হয় যেমন, দাঁতে ব্যথা করনে
আমাদেরকে ডেন্টিস্টের বা ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। ব্যথার কারণ হতে পারে দাঁতের
ক্ষয়, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, আঘাত, নতুন দাঁত গজানো, দাঁত নড়া বা দাঁত পড়ে
যাওয়া ইত্যাদি। দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য আপনি কিছু প্রাকৃতিক উপায়
ব্যবহার করতে পারেন। যেমন লবঙ্গ, রসুন, নুন ও গোলমরিচ, অলিভ অয়েল, বরফ কুচি
ইত্যাদি। এই উপায়গুলি দাঁতের উপর ব্যবহার করলে দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
থাকে। দাঁতের ব্যথা হলে আপনি কিছু ঔষধ বা পেইনকিলার ব্যবহার করতে পারেন। যেমন
অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রুফেন, প্যারাসিটামল ইত্যাদি।
তবে এই ঔষধগুলি নির্দেশিত মাত্রায় এবং ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে।
দাঁতের ব্যথা হলে আপনাকে কিছু খাবার এবং পানীয় এড়াতে হবে। যেমন অতিরিক্ত গরম
বা ঠান্ডা খাবার, অ্যাসিডিক ফল বা রস, কফি, চা, চকলেট, মিষ্টি ইত্যাদি। এই
খাবারগুলি দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে বা দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
আরও পড়ুনঃ
ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
যন্ত্রণা হলে দাঁতের মুখ পরিষ্কার করার মাধ্যমে আপনি যন্ত্রণার কারণে দাঁতের
মুখে জমা থাকা খাদ্য অবশিষ্ট সরিয়ে ফেলতে পারেন। দাঁতের ব্যাথার জন্য আপনি ভরা
পেটে দুটি অ্যাসপিরিন বা একটি আইবুপ্রুফেন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
ব্যথাযুক্ত দাঁতে বরফ কুচি কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখা যেতে পারে। আশা করি আপনি এই
তথ্যগুলি কাজে লাগাতে পারবেন এবং দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে দাঁতের
ব্যথা যদি অতিরিক্ত হয় বা অনেকদিন ধরে চলে আসে, তবে অবশ্যই আপনার ডেন্টিস্টের
কাছে যাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url